Published:
শৈশবের প্রতিটি মুহূর্ত সুন্দরী লাস্যময়ী নারীর ভুবন জয় করা হাসির মত, ফুরিয়ে গেলেও হৃদয়ে থেকে যায়। রমণী হারিয়ে গেলেও যেমন হাসির রেশটা থেকে যায় মনের গভীরে ঠিক তেমনি ছোট বেলার দিন গুলি ফেলে এলেও দখল করে নেয় হৃদয়ের সমস্ত জমিনটা।
আমার ছোট চোখ দুটি যদি হয় অতীতের স্বপ্ন ধরে রাখার দূরবীন, তাহলে আমার ছোট বেলার প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন সেই অতীতের স্বপ্ন ধরে রাখা সারি সারি করে সাজানো একেকটা মহা মূল্যবান শো পিস। আমার বুকের ভেতরের শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্রটা যদি হয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ গুদাম, তাইতো সেখানে সারি বেঁধে সাজানো পণ্যের বস্তার মত আছে আমার ছেলেবেলার সেই সু- মধুর সময় আনন্দঘন মুহূর্ত দিনগুলি।
আজকের আমাদের এই দ্রুততর জীবনে একটু যদি অবসরে বসে যাই, তাহলে আমাদের চোখের সামনে প্রথমেই যে ছবিটা ভেসে উঠে সেটা হল শৈশব আর কৈশোরের চিত্র। আমরা চোখ বন্ধ করে মুহূর্তে দেখে নেই স্মৃতির এ্যালবাম। মনের উঠানে দৌড়াদৌড়ি করে ছেলে বেলার দৃশ্য। দল বেঁধে সকালে মক্তবে যাওয়া, স্কুলের ক্লাস শুরুর আগে এলোমেলো দৌড়ঝাঁপ, গোল্লাছুট, কাবাডি, দাড়িয়াবান্ধা, কানামাছি, বৌছি খেলার দিন গুলি। স্কুল থেকে ফিরে খাবারটা খেয়েই বিকালে মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট খেলা।
আহা! কত স্মৃতি মনে পড়ে যায়। ছোটবেলায় আমি অনেক দুরন্ত ছিলাম। পশুপাখি দেখলে আলাদা আনন্দ কাজ করতো। তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। যেটি উপরে আমার ছবিতে লক্ষ্য করা যায়। ছাগল ছানাটি আমার প্রিয় ছিল। আমি তাকে নিয়ে এক সময় অনেক ব্যস্ত থাকতাম হা হা । যদিও সেটি বেশিদিন বেঁচে থাকে নি। সেটি নিয়ে প্রচুর কান্না করেছিলাম। আরেকটি ঘটনাও প্রচুর মনে পড়ে। সেটি হচ্ছে ব্যাঙের সার্জারি। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল, তাই নিজে ব্যাঙ ধরে সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আফসোস! ব্যাঙটিকে বাঁচাতে পারিনি। তখন বুঝেছিলাম আমার দ্বারা এ কাজ সম্ভব নয়। ছোটবেলার আরও অনেক ঘটনা মনে পড়ে যায় যেগুলো একসাথে বিস্তারিত বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তবে ছোটবেলায় ঘটা ঘটনাগুলো মনে গেঁথে আছে । জানি সবারই এরকম অনেক তিক্ত ও মধুর ঘটনা রয়েছে , যেগুলো আজও মনের গভীরে কোনো এক কোণে পড়ে রয়েছে। মাঝে মাঝেই উকিঁ মারে, বলে চলো ফিরে যাই আবার সেই সময়ে।
সুনিবিড় শান্তির নীড়, দক্ষিণের খোলা জানালা, সারি সারি সুপারি গাছের সাথে মায়ের নষ্ট হয়ে যাওয়া আঁচলের টুকরো দিয়ে বাধানো দোলনায়, টলমল পুকুরের পানি, আমাকে আজও হাতছানি দিয়ে জাগ্রত করে। ছোট বেলায় গ্রামের মাটির ঘর বাঁশের বেড়া নেড় দিয়ে বাঁধা চাল, ঘন সেই সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য শ্বাস-নিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছি। এখনকার গ্রামের ইট পাথরের জীবনে যখন হাঁপিয়ে উঠি, বুকের গভীর ভিতরের জমানো হতাশাটা যখন বাতাসে ভাসিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আরামদায়ক খাটে শরীরটা হেলিয়ে নিদ্রায় দেই, তখন আমার চোখের সামনে খেলা করে দিগন্ত বিস্তৃত শস্য-শ্যামল সবুজ খোলা মাঠ, নীল আকাশের মুক্ত তারা, সোনালী ধানের শীষ।